About

 হবিগঞ্জ জেলাধীন মাধবপুর পৌরসভার  ইতিহাসঃ

 

base-mapপ্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও শাহ্ পরাণ (রহঃ) সহ ৩৬০ আউলিয়ার পূণ্য ভূমি এবং ‘দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি’র দেশ’ সিলেট বিভাগের সিংহদ্বার বলে খ্যাত হবিগঞ্জ জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত মাধবপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মাধবপুর পৌরসভা। সোনাই নদীর তীরে মাধবপুর পৌরশহর অবস্থিত। সিলেট বিভাগের সিংহদার হিসাবে মাধবপুর পৌরসভাটি দেশবিদেশে পরিচিত।  বৃটিশ আমল থেকে মাধবপুর একটি ঐতিহ্যবাহী ব্যাবসা বানিজ্যের সেন্টার  হিসাবে পরিচিত ।

মাধবপুর উহার পূর্ব দিকে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, পশ্চিম দিকে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলা, উত্তরে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ও দক্ষিণে সোনাই নদী অবস্থিত। মাধবপুর পৌরসভার নিকটবর্তী তেলিয়াপাড়া চাবাগান নামক স্থানে মুক্তিযুদ্ধের ০৩নং সেক্টর হিসেবে পরিচালিত হত । মাধবপুর পৌরসভাটি তৎকালীন সরকারে অর্থ মন্ত্রী এস কাপের সাবেক সেক্রেটারী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, হবিগঞ্জের কৃতী সন্তান শাহ্ এ এম এস কিবরিয়ার আন্তরিক প্রচেষ্টায় ২৯ মার্চ ১৯৯৭ খ্রিঃ তারিখে মাধবপুর উপজেলা শহর ও মাধবপুর সদর ইউনিয়নের আংশিক এবং ৪নং আদাঐর ইউনিয়নের আংশিক এলাকা নিয়ে  মাধবপুর পৌরসভা গঠিত হয়। পৌরসভাটি পাচঁটি মৌজার ০৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা বি¯তৃত এবং ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত। আদশুমারী ২০১১ অনুযায়ী পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২১,৯৩০  জন (প্রায়) মোট হোল্ডিং সংখ্যা ৩,৩০৩ টি।

পৌরসভার নিকটবর্তী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন চা বাগান বেষ্টিত পাহাড়ী এলাকা। মাধবপুর উপজেলার বিভিন্ন বাগানের চাপাতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি মাধবপুর পৌরসভার উপরে দিয়ে অতিবাহিত হওয়াই যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বিখ্যাত স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাধবপুর পৌরসভাটি সোনাই, খাস্তি, তিতাস নদীর সংযোগস্থলে অবস্থিত। মাধবপুর পৌরসভা সদরে অবস্থিত মাধবপুর বাজার টি একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। মাধবপুর পৌরসভাটি হাওর ব্যষ্টিত হওয়াই হাওড়ের উৎপাদিত ফসল যেমন- ধান, চাল, পাট, সরিষা ও মাছ ইত্যাদি পন্য মাধবপুর বাজার হতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী হয়ে থাকে। তাছাড়া মাধবপুর পৌরসভায় অবস্থিত কুটির শিল্পের ফিল্টার (পানির) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে।  এ পানির ফিল্টার সারা দেশে বিশাল সুনাম অর্জন করেছে।

পৌরসভা গঠন হওয়ার পর মাধবপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জনাব এ কে এম মমিনুল ইসলাম এবং জনাব মোঃ ইকবাল হোসেন মোল্লা পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। সরকার ১৫/০২/২০০৮ খ্রিঃ তারিখে মাধবপুর পৌরসভকে ‘‘গ” শ্রেনী হতে ‘‘খ” শ্রেনীতে উন্নীত করেন।  ১৯৯৯ সালে  অনুষ্ঠিত পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে জনাব শাহ্ মোঃ মুসলিম চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পরবর্তীতে ২০০৪   দ্বিতীয় নির্বাচনে জনাব শাহ্ মোঃ মুসলিম দ্বিতীয় বার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে পৌরসভার দায়িত্ব পালন করেন। ১৮ জানুয়ারী ২০১১ খ্রিঃ তারিখে অনুষ্ঠিত তৃতীয় নির্বাচনে জনাব হিরেন্দ্র লাল সাহা, মেয়র  নির্বাচিত হয়ে সুনাম ও দক্ষতার সহিত দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রমে নাগরিক সেবার মান বৃদ্ধি, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি, ৭৫% পৌরকর আদায় এবং  পৌর পরিষদ, কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং পৌরবাসীর সহযোগিতার ফলে নিধারিত লক্ষমাত্রা অর্জন ও সকল শর্ত পূরন করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, গত ০৪/১০/২০১২খ্রিঃ তারিখে মাধবপুর পৌরসভাকে “খ” শ্রেনী হতে ‘‘ক” শ্রেনীতে উন্নীত করেন।

বর্তমানে পৌরসভায় মেয়র ও ১২ জন কাউন্সিলর এবং ২৬ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী কর্মরত আছেন। তাহা ছাড়া চুক্তিভিত্তিক সুইপার/ঝাড়–দার দ্বারা প্রতিনিয়ত পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পরিছন্ন রাখা হয়। গরিব দুস্থ মানুষদের আর্থিক অনুদান প্রদান, জনস্বাস্থ্য রক্ষায় শতভাগ স্যানিটেশন

সুবিধা প্রদান এবং পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ১৬টি টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে। তাছাড়া মাধবপুর পৌরসভা বাংলাদেশের অন্যান্য লেখাপড়ার ন্যায় জনসেবামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করে আসছে। পৌরসভার অধীনে পৌর এলাকার কোমলমতি শিশুদেরকে লেখাপড়ার জন্য পৌরসভার অধীনে একটি পৌর কিন্ডার গার্টেন স্কুল পরিচালিত হচ্ছে। তাহা ছাড়া পৌর এলাকায় ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি কিন্ডার গার্টেন, ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি মহাবিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪টি মাদ্রাসা, ৬টি মিল কারখানা ও ৬টি ক্রিয়া সংগঠন রয়েছে।
পৌরসভার পারফরমেন্স ভাল থাকায়  গুরুত্বপূর্ন নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, IUIDP, UIIGP-II, MGSP & DPHE প্রকল্পে মাধবপুর পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার রাস্তা-ঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, ড্রেন, মার্কেট, কমিউনিটি সেন্টার, ষ্টেডিয়াম, মন্দির, মসজিদ, শ্মশ্বান, গোরস্থান, শিক্ষা প্রতিষ্টান, পৌর এলাকায় বৈদ্যুতিক লাইন এবং স্যানিটেশন ইত্যাদি নির্মান করার পরিকল্পনা রয়েছে।

পৌরসভা প্রতিষ্টার পূর্বে পৌর এলাকাটি ছিল অনুন্নত ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ছিল খুবই অপ্রতুল। ১৯৯৭ সনে পৌরসভা প্রতিষ্টা হওয়ার পর যোগাযোগ ও অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বর্তমানে প্রত্যেক এলাকায় পাকা, আধাপাকা রাস্তাঘাট, ব্রীজ, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, পাকাঘাটলা, যাত্রীছাউনী ও  ড্রেন ইত্যাদি নির্মান করা হয়েছে। প্রধান প্রধান রাস্তায় বিদ্যুতায়ন করে আলোকিত করা হয়েছে। পৌরসভায় পাকা রাস্তা- ২৪.৭৯ কিলোমিটার, ইট সলিং রাস্তা- ৪.১৫ কিলোমিটার, কাচা রাস্তা- ১৫.৩৪ কিলোমিটার এবং পাকা ড্রেনের দৈর্ঘ্য ৫.৭৫ কিলোমিটার, এবং বৈদ্যুতিক লাইন ১১ কিলোমিটার, পানির সরবরাহ লাইন ৭.৫০ কিলোমিটার বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

মাধবপুর পৌরসভাটি ১ম শ্রেনীতে উন্নীত হওয়ায় ও পৌরবাসীর নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং,দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকার ফলে বাহিরের লোকজন পৌর এলাকার অভ্যন্তরে বসবাস করার একটা প্রবল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।